ভূমিকা:
পবিত্র লাইলাতুল মিরাজের সময় মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য হাদিয়া (উপঢৌকনস্বরূপ) ৫০ ওয়াক্ত
নামাজের বিধান নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তনকালে পথিমধ্যে হযরত মূসা আলাইহিমুস সালামের
সাথে সাক্ষাতকালে তিনি নামাজের ওয়াক্তের পরিমাণ আল্লাহর কাছ থেকে কমিয়ে আনার জন্য
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সুপারিশ করেন।
পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সালাত বা নামাজের গুরুত্ব:
এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
সালাত বা নামায কি এবং কেন?
صلاة (সালাত) আরবি শব্দ, বহুবচনে ٱلصَّلَوَات (সালাওয়াত । “সালাত”-এর আভিধানিক বা শাব্দিক
অর্থ: দোয়া, রহমত, নত হওয়া, অনুসরণ করা, উপাসনা, ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি বুঝায় ।
ইসলামী শারীয়াতের পরিভাষায় সালাত বা নামায:
মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক পবিত্র কুরআনে নির্দেশিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আমলকৃত কতিপয় আহকাম-আরকান সহকারে বিশেষ বিশেষ ওয়াক্ত বা
সময়কালে আদায়কৃত বিশেষ ইবাদাত-কে সালাত বা নামায বলে।
নামাযের প্রকারভেদ:
১.ফরয ২. ওয়াজিব ৩. সুন্নাত ৪. নফল।
দৈনিক ৫ পাঁচ) ওয়াক্ত নামাযের ইতিহাস:
পবিত্র লাইলাতুল মিরাজের সময় মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য হাদিয়া (উপঢৌকনস্বরূপ) ৫০ ওয়াক্ত
নামাজের বিধান নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তনকালে পথিমধ্যে হযরত মূসা আলাইহিমুস সালামের
সাথে সাক্ষাতকালে তিনি নামাজের ওয়াক্তের পরিমাণ আল্লাহর কাছ থেকে কমিয়ে আনার জন্য
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সুপারিশ করেন।
ওয়াক্ত নামাযের রাকায়াতের ইতিহাস:
আমি উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২
রাকাতের বেশি পড়েন নি। রেওয়াতকারী আরো বলেন, আমি উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথেও
সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ
তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাঝে
রেখেছি উত্তম আদর্শ। (আল কুরআন)।
ওয়াক্ত নামাযের ফরজিয়াত বিধানের ইতিকথা:
ইবনে হিশাম (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন (ইসলামের সূচনাকালে) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম নামাজের সময় পাহাড়ে চলে যেতেন এবং গোপনে নামাজ আদায়
করতেন। একবার চাচাজান আবু তালেব রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ও আলী
(রদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে নামাজ পড়তে দেখে ফেলেন। তিনি এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁকে
জানানোর পর তিনি (আবু তালেব) বলেন, “এই অভ্যাস অব্যাহত রেখো”। (তথ্যসূত্রঃ ১.ইবনে
হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৭) ।
সহজ সালাত বা নামায শিক্ষা:
১.তাকবীরে তাহরীমাঃ প্রথমে অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে নামাজের এরাদা করে
ক্বিবলামুখি হয়ে উভয় হাত উঠয়ে তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ اڪبر الله (আল্লাহু আকবার-অর্থঃ
আল্লাহ সবচেয়ে বড়।) বলে হাত বেঁধে তারপর নিম্নোক্ত ছানা পড়২.ছানাপড়া সুবহা-নাকা
আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারাকা-ছমুকা ওয়াতা‘আলা জাদ্দুকা
৩.আউযুবিল্লাহ পড়া ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্ব-নির রজীম। অর্থঃ আমি বিতাড়িত শয়তান
থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৪.বিসমিল্লাহ পড়া বিসমিল্লাহির রহমা-নির্ রহী-ম। অর্থঃ পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু
আল্লাহর নামে (শুরু করছি৫.সূরাহ ফাতিহা পড়াঃ (১)আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আলামী-ন,
(২)আর রহমা-নির রহী-ম, (৩)মা-লিকি ইয়াওমিদ্দী-ন, (৪)ইয়্যা- কানা‘বুদু ওয়াইয়্যা কানাসতা’ঈ-
ন, (৫)ইহদিনাসসিরা-ত্বল মুসতাক্বী-ম, (৬)সিরাতল্লাযি-না আন’আমতা ‘আলাইহিম, (৭)গইরিল
মাগদু-বি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্বদ্ব—ল্লী—ন।(আ-মীন)।)।
সালাত (নামায) দিনে ৫ (পাঁচ) ওয়াক্তে (সময়ে) ৫(পাঁচ) বার ফরযে আ’ঈন (অবশ্যই পালনীয়):
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূর্য ওঠার আগে এক রাকাআত (ফরজ নামাজ) পেল, সে ফজরের নামাজ
পেল। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজ
আসর নামাযের সর্বনিম সময়কাল:যে ব্যক্তি সূর্য ডারগে আসরের এক রাকাআত নামাজ
পেল,সে-ও আসর নামাজ পেল।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।
ফজর নামাযের সর্বনিম্ন সময়কাল:
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূর্য ওঠার আগে এক রাকাআত (ফরজ নামাজ) পেল, সে ফজরের নামাজ
পেল। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
আযান-ইকামাত: মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য প্রচারের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম:
আরবী أَذِنَ (আজিনা: ডাকা, আহবান) শব্দ থেকে আরবী أَذَان (আযান) শব্দের বুৎপত্তি যার
অর্থ: ঘোষণা ধ্বনি (Announcement) । এই শব্দের আরেকটি বুৎপত্তিগত অর্থ হল ʾআজুন।
(أُذُن), যার অর্থ হল “শোনা”। কুরআনে মোট পাঁচ স্থানে আজুন শব্দটি এসেছে।
ইসলামী পারিভাষিক অর্থে: শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওয়াক্তে
(সময়ে) মুয়াজ্জিন সাহেব কর্তৃক উচ্চকণ্ঠে আশপাশের মহল্লা/এলাকাবাসী মুমিন-মুসলিম
মুসল্লিদেরকে ফরয সালাত বা নামায জামায়াতের সাথে আদায়ে মসজিদে আসার জন্য আহবান
করা-কে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্[১] হয়। বিভিন্ন দেশে ভাষাভেদে আযান
শব্দের বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলন রয়েছে।
এশীয়দেশ আফগানিস্তান, আজারবাইজান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ইরান, মালয়েশিয়া,
তাজাকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে আরবী উচ্চারিত হুবহু “আজান”/ “আযান” শব্দ-ই উচ্চারিত
হয়ে থাকে এবং উজবেকিস্তানে সামান্য হারকাত ব্যতিক্রমে উচ্চারিত হয় “আজন” হিসাবে।
পক্ষান্তরে ইউরোপীয় দেশ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং ইউরোশীয় দেশ তুরস্কে আজান-কে বলা হয় “ইজান”।
আযানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
তদুপরি, মদীনার দূর-দূরান্ত হতে মুসলমানের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি লাভ করলে এসব এলাকা
থেকে আগত নও মুসলিম মুসল্লিদের ওয়াক্তমাফিক মসজিদে নব্বীতে জমায়েত করে (একত্রিত)
জামায়াতবদ্ধভাবে সালাত বা নামায আদায়ের ব্যাপারে খবর পৌঁছানোর কোন উপায় অবলম্বনও
তখন কারো জানা ছিল না। ফলে মুসল্লিরা নিজের মত করে মসজিদে নব্বীতে আগমন করতেন
এবং যে যার মতো করে বিচ্ছিন্নভাবে একাকী সালাত আদায় করে নিতেন। বিষয়টি সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ভাবিয়ে তুলেছিল। এ বিষয়ে তিনি বিশদ আলোচনা ও পন্থা নির্ধারণ
করার মানসে একদিন সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে আলোচনায় বসেন।
সালাত বা নামায বিষয়ে আমাদের নেতিবাচক কতিপয় আচার-আচরণ:
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ
করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোনো দরজা
দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।
মানুষ ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়াঃ
সামনের কাতারে নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি। হয়তো এ কারণে সাধারণত: জুমা’আবার কিংবা
পবিত্র রমজান মাসের তারাবিহ কিংবা ঈদের নামাজে এসে একদল মানুষ চাপাচাপি করে
সামনে গিয়ে বসে। অনেক সময় জায়গা না থাকা সত্ত্বেও একজন আরেকজনের গায়ের ওপর
বসে পড়ার উপক্রম করে থাকে। এতে আরেক মুসল্লির কষ্ট হয় যা শরীয়াহ সম্মত নয়।
জুমআ’বার:মুসলমানদের এক অনন্য অসাধারণ ফাজিলাত ও বারাকাতপূর্ণ দিবস:
الْجُمُعَةِ জুমআ’ এবং জা’মি (জা’মে )আরবী শব্দ-যা আরবী جَمِيعًا (জামিআ’) শব্দ থেকে নিস্পন্ন। ১.
সূরাহ্ আলে ইমরানের ১০৩ নং-আয়াতে বর্ণিত (وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّـهِ جَمِيعًا ) جَمِيعًا (জামিআ’) শব্দ
দ্বারা জমায়েত, একতাবদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ, সমবেত হওয়া ২. সূরাহ্ জুমুআ’র আয়াত নং-৯-এ বর্ণিত
يَوْمِ الْجُمُعَةِ (ইয়াউমিল জুমুআ’) বলতে জুমআ’ বার বুঝানো হয়েছে ৩. لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ
(লিছ্বছ্বলাতি মিন ইয়াওমিল জুমু’আতি) বলতে জুমআ’র সালাত বা নামায-কে বুঝানো হয়েছে
এবং ৪.”জা’মিয়া বলতে জমায়েতবদ্ধ বা সমবেতভাবে (জামাআ’তের সাথে) সালাত বা নামায
আদায়ের মসজিদ বুঝায় l
বিনা ওজরে মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামায আদায়কারীর প্রতি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কঠোর সতর্ক বার্তা:
ভাবনার বিষয় এই যে, রহমাতুল্লিল ‘আলামীন, যিনি সারা বিশ্বের জন্যই যেখানে রহমাতুল্লিল
আলামীন অর্থাৎ বিশ্ব জগতজুড়েই তিনি মহান আল্লাহর অশেষ রহমত (দয়ার সাগর)- যাঁর
আচরণে কাট্টা কাফের পর্যন্ত শান্তি-স্বস্তি এবং নিরাপত্তা পেতেন। উম্মতের সামান্য দুঃখ-কষ্টও
যাঁর ছিল অসহনীয়- কাল কেয়ামতের পর কঠিন হিসাব নিকাশ তথা হাশর দিবসে সকলে যখন
ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি বলে হয়রান-পেরেশান হয়ে যাবেন, সেই মহাবিপদকালেও রউফুর
রহিম-দয়াল নবী স্বীয় উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কেবল একটা দোয়াই
করতে থাকবেন: রব্বি হাবলি উম‘আয় আমার প্রতিপালক (রব) আমার উম্মতকে রক্ষা
করুন’- এমন দয়াল নবী, দয়ার সাগর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত:
যারা বিনা কারণে কেবলমাত্র মসজিদে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়ে গাফেলতি (অলসতা)
করে, তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এতে সুস্পষ্টভাবে নামাযের জামায়াতের
গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।
উপসংহার:
الْجُمُعَةِ জুমআ’ এবং জা’মি (জা’মে )আরবী শব্দ-যা আরবী جَمِيعًا (জামিআ’) শব্দ থেকে নিস্পন্ন। ১.
সূরাহ্ আলে ইমরানের ১০৩ নং-আয়াতে বর্ণিত (وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّـهِ جَمِيعًا ) جَمِيعًا (জামিআ’) শব্দ
দ্বারা জমায়েত, একতাবদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ, সমবেত হওয়া ২. সূরাহ্ জুমুআ’র আয়াত নং-৯-এ বর্ণিত
يَوْمِ الْجُمُعَةِ (ইয়াউমিল জুমুআ’) বলতে জুমআ’ বার বুঝানো হয়েছে ৩. لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ
(লিছ্বছ্বলাতি মিন ইয়াওমিল জুমু’আতি) বলতে জুমআ’র সালাত বা নামায-কে বুঝানো হয়েছে
Outstanding feature