জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

 

 

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

 

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে যে কী মর্যাদা আছে তা

যদি মানুষ জানতে পারত, তাহলে তা পাওয়ার জন্য তারা প্রয়োজনবোধে লটারি করত। দুপুরের

নামাজের যে মর্যাদা আছে তা যদি তারা জানতে পারত, তাহলে তারা এটা লাভ করার জন্য

প্রতিযোগিতায় লেগে যেত। এশা ও ফজরের নামাজের মধ্যে যে (তাদের জন্য) কী মর্যাদা রয়েছে,

তা যদি জানতে পারত, তাহলে তারা হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও এসে নামাজে উপস্থিত হতো।’

(মুসলিম, হাদিস : ৮৬৭)

 

আরো পড়ুন

 

জামাত পরিত্যাগকারীর শাস্তি:

 

রাসুল (সা.) জামাতে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এক হাদিসে নবী (সা.)

বলেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনল এবং তার কোনো অপারগতা না থাকা সত্ত্বেও জামাতে উপস্থিত

হলো না, তার সালাত হবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৯৩)

 

রাসুল (সা.) জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তির ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করেছেন। তাদের

ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। হাদিসে বিধৃত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার

প্রাণ যাঁর হাতে, তাঁর কসম করে বলছি! অবশ্যই আমি সংকল্প করেছি, আমি কাঠ সংগ্রহ করার

নির্দেশ দেব, তারপর আমি নামাজের হুকুম দেব এবং এ জন্য আজান দেওয়া হবে, তারপর

আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করব সে লোকদের নামাজ পড়াবে। এরপর আমি ওই লোকদের দিকে

যাব, যারা জামাতে হাজির হয়নি। এবং তাদের বাড়িঘর তাদের সামনেই জ্বালিয়ে দেব।’ (সহিহ

বুখারি, হাদিস : ২৪২০)

 

বিশেষ অপরাগতার কারণে জামাত ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি, ঘর

থেকে বের হলে, অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা, রাস্তায় বেশি কাদা ও অতি অন্ধকার থাকলে, অন্ধ ব্যক্তি,

শত্রুর ভয়, বন্দি ব্যক্তি প্রমুখের জন্য জামাতে নামাজ না পড়ার অনুমতি আছে।

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

 

জামাত পরিত্যাগকারীর প্রতি সতর্কতা:

 

আরো পড়ুন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ করে বলছি,

আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য

হুকুম দেই।

আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের

বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।’ (বুখারি)

 

জামাতে নামাজ পড়ার সওয়াব বেশি হওয়ার কারণ:

 

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন,‘কোনো ব্যক্তির জামাতের সঙ্গে নামাজের সওয়াব, তার নিজের ঘরে ও বাজারে

আদায়কৃত নামাহের সওয়াবের চেয়ে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর কারণ এই যে, সে যখন

উত্তমরূপে অজু করলো, এরপর একমাত্র নামাজের উদ্দেশে মসজিদে রওয়ানা করলো তখন

তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়।

নামাজ আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ নামাজের স্থানে থাকে, মালাকগণ (ফেরেশতাগণ) তার

জন্য এ বলে দোয়া করতে থাকেন-

‘হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।’

আবার তোমাদের কেউ যতক্ষণ নামাজের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজে রত বলে

গণ্য হয়।(বুখারি)

 

আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ- ফজর, জোহর, আসর,

মাগরিব, ইশা, জুমা, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ জামাতে পড়াকে আবশ্যক

করেছেন। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জামাতে নামাজ আদায় করা। কোরআন-সুন্নাহর

তাগিদ মেনে এবং ঘোষিত ফজিলতগুলো পাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

 

আরো পড়ুন

 

নামাজের গুরুত্ব:

 

 

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। এই নামাজগুলো জামাতে পড়ার প্রতি বিশেষভাবেতাগিদ দেওয়া হয়েছে। জামাতে নামাজ আদায় করার তাগিদ দিয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,‘রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৩) 

২৭ গুণ বেশি সওয়াব :

 

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী

নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি :আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যেব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত প্রথম তাকবিরের সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা

তাকে দুটি পুরস্কার দান করবেন। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। দুই. মুনাফিকের তালিকা

থেকে তার নাম কেটে দেবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১)

 

জামাত পরিত্যাগকারীকে তিরস্কার :

 

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার প্রাণ

যাঁর হাতে, তাঁর শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দিই আর

নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দিই।

তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি

ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো

আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৮)

 

 

মহান আল্লাহ আমাদের জামাতে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন।

 

নবী কারিম (সা.) বলেন—

 

যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন আদমকে
(আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত
থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।

মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৮৫৪

 

অন্য আরেকটি হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময়

আছে। কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে— তাহলে তার

কোনো কল্যাণ কামনা থাকলে- আল্লাহ তা পূরণ করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০০)

 

জুমার দিনের বিশেষ আমল:

 

রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো,

কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর

১০৪৭)।

 

এমনিতেই তিরমিজি শরিফের হাদিস অনুযায়ী আমরা জানতে পারি, যে ব্যক্তি দরুদ পাঠ করে

আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাযিল করবেন। সুতরাং আমাদের জুমার দিন অন্যান্য আমলের

সাথে সাথে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে।

জুমার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই দিনটিকে কাজে লাগানো।

 

জুমার নামাজের গুরুত্ব:

 

সুরা ‘জুমা’ জুমার নামাজের গুরুত্ব বর্ণনায় আল্লাহ পাক বলছেন, ‘হে ইমানদারগণ! জুমার দিনে
যখন সালাতের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনাবেচা ত্যাগ
করো, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে (সুরা জুমা, আয়াত ৯)

জুমার দিন এবং এদিনের আমল সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এককভাবে অন্য কোনো

দিন বা সেদিনের নামাজ নিয়ে এত বর্ণনা আর পাওয়া যায় না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমা’র রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মারা যায়, আল্লাহ তায়ালা

তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দিবেন।’ (তিরমিযী:১০৭৮)

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে, তার মধ্যে

সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে

জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে

(সহিহ মুসলিম)।’

 

আমলের দিক থেকে আল্লাহ তাআলা যেসব দিনকে ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন, এর

অন্যতম হলো জুমার দিন। এদিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক নানা ঘটনা।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথম

মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল, দ্বিতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ

করে, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল, তৃতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল, সে যেন

একটি ছাগল কোরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ যে ব্যক্তি মসজিদে গেল, সে যেন একটি মুরগি

সদকা করল। আর পঞ্চম যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল, সে যেন একটি ডিম সদকা করল।

এরপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুতবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ

করে খুতবা শুনতে বসে যায়।’ (সহিহ বুখারি: ৮৮১)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *