পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের বিশেষ গুরুত্ব
ভূমিকা:
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের বিশেষ গুরুত্ব এখন আপনাদের মাঝে আলোচনা করব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিষয়ে এ সম্পর্কে আপনাদের
ধারণা দিতে চাইl
নামাজ কায়েম করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং কায়েম করো
ফজরের নামাজ। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজ উপস্থিতির সময়। [সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮
(দ্বিতীয় পর্ব)]
আয়াতে নামাজ বোঝানোর জন্য ‘কোরআন’ শব্দ আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি ‘ফজর’ শব্দ
ব্যবহার করা হয়েছে। ‘কোরআন’ অর্থ পড়া বা পাঠ করা। আর ‘ফজর’ শব্দের অর্থ ভোর হওয়া বা
প্রভাতের উদয় হওয়াl
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের বিশেষ গুরুত্ব:
থাকবে…।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৭)
অন্য হাদিসে ফজরের নামাজ আদায়কারীকে জান্নাতি মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি শীতল
সময়ে নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আরো পড়ুন:
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত
আলোচ্য আয়াতের শেষাংশে ফজরের জন্য একটি গুণবাচক শব্দ আনা হয়েছে। সেটি হলো
‘মাশহুদ’। এর অর্থ উপস্থিত হওয়া। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এ সময় দিন-রাতের উভয় দল
ফেরেশতা দুনিয়ায় মিলিত হয়। তাই একে ‘মাশহুদ’ বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ
করেছেন, ‘রাতের ফেরেশতা ও দিনের ফেরেশতারা ফজরের সময় উপস্থিত হয়।’ (তিরমিজি,
হাদিস : ৩১৩৫)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জামাতের নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের
চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। রাতের ফেরেশতা ও দিনের ফেরেশতারা ফজরের নামাজে একত্র হয়ে
থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৮, মুসলিম, হাদিস : ৬৪৯)
শৈথিল্য শয়তানকে প্রলুব্ধ করে :
আমল শুরু করার পর কেউ তাতে শৈথিল্য প্রদর্শন করলে শয়তান প্রলুব্ধ হয় এবং ব্যক্তি
শয়তানের শিকারে পরিণত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে সেই ব্যক্তির
বৃত্তান্ত পড়ে শোনাও, যাকে আমি দিয়েছিলাম নিদর্শন, অতঃপর সে তাকে বর্জন করে, পরে
শয়তান তার পেছনে লাগে। আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৫)
যেভাবে ধারাবাহিকতা রক্ষা পায়:
আরো পড়ুন:
সালাত আদায়ের গুরুত্ব
আলেমরা বলেন, তিন কাজের মাধ্যমে মুমিন আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারে। তা হলো—
আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা :
মুমিন নিজের ওপর আস্থা না রেখে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখবে এবং আমলের ধারাবাহিকতা
রক্ষায় তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করবে। পবিত্র কোরআনে দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘হে আমাদের
প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না এবং
তোমার কাছে থেকে আমাদেরকে করুণা দান করো। নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা।’ (সুরা : আলে
ইমরান, আয়াত : ৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমত প্রার্থী। কাজেই আমাকে এক
পলকের জন্যও আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না এবং আমার সব কিছু সুষ্ঠুভাবে
সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র ইলাহ। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০৯০)
সর্বোচ্চ চেষ্টা করা :
আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার পাশাপাশি মুমিন তার সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু অব্যাহত
রাখবে। কেননা যে ব্যক্তি নেক কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় চেষ্টা করবে, তার জন্য আল্লাহর
অঙ্গীকার হলো ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে
পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)
আরো পড়ুন:
নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস
পুণ্যবানদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা :
পুণ্যবানদের সান্নিধ্য মানুষকে পুণ্যের কাজে উদ্বুদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনের একাধিক
আয়াতে মানুষকে আল্লাহওয়ালা ও নেককার মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে।
যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত
হও।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং যারা রুকু করে তাদের
সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৩)
রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই কিছু লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার
রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে এমন কিছু লোক আছে, যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং
কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৭
ইবাদতে ভারসাম্য রক্ষা করা :
ইবাদতের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমল নির্বাচনে নিজের সামর্থ্য বিবেচনা করা ও ভারসাম্য রক্ষা
করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন, হে মানুষ, যত আমল তোমরা স্থায়ীভাবে করতে সক্ষম তত
আমল করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের ইবাদতের সওয়াব দিতে ক্লান্ত হবেন না; বরং
তোমরাই ইবাদত-বন্দেগি করতে করতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়বে। আর অল্প হলেও আল্লাহর কাছে
স্থায়ী আমলই সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭১২
ধারাবাহিকতা রক্ষার পুরস্কার জান্নাত:
কোনো নেক আমল শুরু করার পর তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, বিশেষত ঈমান ও আমলের
ওপর দৃঢ়তার পুরস্কার জান্নাত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ,
অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাদের কাছে অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো
না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার জন্য
আনন্দিত হও। আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য
রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমরা ফরমায়েশ
করো। এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ (সুরা : ত হা-মিম-সাজদা,
আয়াত : ৩০-৩২
সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্যোদয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত সময়কে ইসলামের পরিভাষায় ফজর
বলা হয়। ইসলামে দৈনিক যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে, তার মধ্যে ফজরের নামাজ
সর্বাধিক গুরুত্ববহ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ফজরের নামে শপথ করেছেন। ফজর
নামে স্বতন্ত্র একটি সুরাও নাজিল করা হয়েছে। ফজরের নামাজের নির্দেশ দিয়ে এরশাদ হয়েছে,
‘হে নবী, সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার নামা পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং
ফজরের সময় কোরআন পাঠে যত্নবান থেকো। স্মরণ রেখো, ফজরের (নামাজের) তিলাওয়াতে
(ফেরেশতাদের) সমাবেশ ঘটে।’ (সুরা ইসরা: ৭৮) ফজরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী
(সা.) বলেন, ‘ফজরের দুই রাকাত নামাজ পুরো দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম।’
(মুসলিম)