ভূমিকা:
হাদীস কাকে বলে? হাদীসের উপরে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বৃহত আকারের পুস্তকের প্রয়োজন। আর একথা জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রেরই জানা রয়েছে যে,
শুধুমাত্র হাদীস এবং উসূলে হাদীস বিষয়ের উপরে অসংখ্য বহু মূল্যবান কিতাব বিগত প্রায় দেড় হাজার বছরে পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় রচিত, পঠিত এবং সমাদৃত হয়ে আসছে।হাদীস কাকে বলে?
আলহামদুলিল্লাহ, কলেবর বৃদ্ধি না হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে অত্র নিবন্ধে শুধু হাদীস বিষয়ক মৌলিক ধারণা তুলে ধরারই চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহু তাআ’লা।
প্রথমেই হাদীসের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাব। বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে হাদীসের প্রকার-প্রকরণ বিবেচনা করেছেন মুহাদ্দিসীনে কিরাম।
হাদীস কাকে বলে? হাদীস (ﺣَﺪِﻳْﺚ ) এর শাব্দিক অর্থ- নতুন; প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্তু পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীস।
এর আরেক অর্থ হলো: কথা। ফক্বীহগণের পরিভাষায় নাবী কারীম (ﷺ ) আল্লাহর রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়।
কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন।হাদীস কাকে বলে?
হাদীসের সংজ্ঞায় কেউ কেউ বলেন- হাদিস (আরবিতে الحديث) হলো মূলত: ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ ঐশীবাণীবাহক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী ও জীবনাচরণ।
আল্লামা হাফেজ সাখাবী (রহ) বলেন-
والحديث لغة ضد القد يم واصطلا حامااضيف الى النبى ﷺ قولا له اوفعلا له اوتقرير اوصفة حتى الحركات والسكنات فى اليقظة والمنام –
অর্থ : আভিধানিক অর্থে হাদীস শব্দটি কাদীম তথা অবিনশ্বরের বিপরীত আর পরিভাষায় বলা হয় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত।
‘হাদীস (حديث) এমন একটি বিষয় যা রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, কর্ম ও নীরবতা এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবিঈনদের কথা, কর্ম ও মৌন সম্মতিকে বুঝায়।’
হাদীস সংরক্ষণ ও বর্ণনা করার ফযীলত:
হাদীস সংরক্ষণ করা বর্ণনা করা অত্যন্ত ফযীলতময়।
কারণ এর মাধ্যমে প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র কালামের হেফাযত করা হয়। আর এরকম ব্যক্তির ব্যাপারে প্রিয়নবী বলেছেন,
نضرالله امرأسمع مقالتى فوعاهاواداها كماسمع فرب حامل فقه غير فقيه ورب حامل فقه الى من هوافقه منه –
অর্থ : আল্লাহ পাক সেই ব্যক্তিকে সতেজ, ও সমুজ্জ্বল রাখুন,
যে আমার কথাগুলো শুনেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অপরজনের নিকট তা পৌঁছে দিয়েছে। (আবু দাউদ)
এই হাদীস আমাদের নিকট তুলে ধরে হাদীস বর্ণনা করার গৌরব ও সম্মান। এজন্যে এই হাদীসের ব্যাখ্যায় কোন কোন মুহাদ্দিস বলেছেন,
হাদীসের প্রকারভেদ:
হাদীসের মূল বক্তব্য হিসেবে হাদীস তিন প্রকার। যথা:
১। ক্বওলী হাদীস: কোন বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) যা বলেছেন,হাদীস কাকে বলে?
অর্থাৎ যে হাদীসে তাঁর কোন কথা বিবৃত হয়েছে তাকে ক্বওলী (বাণী সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।
২। ফে’লী হাদীস: মহানাবী (ﷺ )-এর কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচরণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতিনীতি পরিস্ফুট হয়েছে।
অতএব যে হাদীসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফে’লী (কর্ম সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।হাদীস কাকে বলে?
৩। তাকরীরী হাদীস: সাহাবীগণের যে সব কথা বা কাজ নাবী কারীম (ﷺ )-এর অনুমোদন ও সমর্থন প্রাপ্ত হয়েছে, সে ধরনের কোন কথা বা
রাবীদের সংখ্যা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। খবরে মুতাওয়াতির: যে হাদীস এত অধিক সংখ্যক রাবী বর্ণনা করেছেন যাদেও মিথ্যার উপর একমত হওয়া অসম্ভব।
২। খবরে মাশহুর: প্রত্যেক যুগে অন্তত: তিনজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন,তাকে খবরে মাশহুর বলে, তাকে মুস্তাফিজ ও বলে।
৩। খবরে ওয়াহেদ বা খবরে আহাদ: হাদীস গরীব আজিজ এবং খবরে মাশহুর এ তিন প্রকারের হাদীদকে একত্রে খবরে আহাদ বলে, প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথকভাবে খবরে ওয়াহিদ বলে।
রাবীদের সিলসিলা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। মারফু হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ রাসুল(সঃ) পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মারফু হাদীস বলে।
২। মাওকুফ হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাওকুফ হাদীস বলে।
৩। মাকতু হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাকতু হাদীস বলে।
মুনকাতে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। মুরসাল হাদীস: যে হাদীসে রাবীর নাম বাদ পড়া শেষের দিকে অথাৎ সাহাবীর নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদীস বলে।
২। মুয়াল্লাক হাদীস: যে হাদীসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদীস বলে।
৩। মুদাল হাদীস: যে হাদীসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয় তাকে মুদাল হাদীস বলে।
বিশ্বস্ততা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃহাদীস কাকে বলে?
১। সহীহ হাদীসঃ যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে, সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে।
২। হাসান হাদীসঃ সহীহ সবগুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয় তাকে হাসান হাদীস বলে।
৩। যায়ীফ হাদীসঃ হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যায়ীফ হাদীস বলে।
হাদীসে কুদসীঃ “যে হাদীসের মুল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল (সঃ) কে ইলহাম বা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দিয়েছেন, রাসূল (সঃ) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীসে কুদসী বলে।
ইলমে হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিভাষা:
সুন্নাহ (ﺍﻟﺴﻨﺔ): হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ্ (ﺍﻟﺴﻨﺔ) সুন্নাত শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি নাবী কারীম (ﷺ ) অবলম্বন করতেন তাকে সুন্নাত বলা হয়।
প্রশ্নোত্তরে হাদীস বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু টার্মস:
প্রশ্নঃ হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ নবী (সাঃ)এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদীছ বলে।
প্রশ্নঃ হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ হাদীছ দুপ্রকারঃ মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) হাদীছ ও (মারদূদ) অগ্রহণযোগ্য হাদীছ।
প্রশ্নঃ মাকবূল হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ মাকবূল হাদীছ দুপ্রকারঃ ছহীহ ও হাসান।
প্রশ্নঃ মারদূদ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ দুপ্রকারঃ যঈফ (দুর্বল) ও জাল (বানোয়াট)।
প্রশ্নঃ সহীহ হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে হাদীছটি নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, উহার সনদ পরস্পর সম্পৃক্ত, তার মধ্যে গোপন কোন ত্রুটি নেই এবং উহা শাযও (তথা অন্য কোন অধিকতর নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিরোধী) নয় তাকে সহীহ হাদীছ বলে।
প্রশ্নঃ প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ ৬টি। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ।
প্রশ্নঃ সিহাহ সিত্তা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ হাদীছের ছয়টি গ্রন্থকে বুঝানো হয়। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ। (বুখারী ও মুসলিমের সবগুলো এবং অন্য কিতাবগুলোর অধিকাংশ হাদীছ বিশুদ্ধ, তাই এগুলোকে একসাথে সিহাহ সিত্তা বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ বলা হয়)
প্রশ্নঃ হাদীছ গ্রন্থগুলোর মধ্যে কোন কিতাবে সবচেয়ে বেশী হাদীছ সংকলিত হয়েছে?
উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদে (হাদিস সংখ্যা ২৭৭৪৬টি)।
বেশী সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগনের কয়েকজন:
১। হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ৫৩৭৪ টি, ইনতিকাল: ৫৭ হিজরী, বয়স: ৭৮ বছর।
২। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ২২১০ টি, ইনতিকাল: ৫৮ হিজরী, বয়স: ৬৭ বছর।
উপসংহার:
এখান থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, হাদিস কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ এবং অন্যান্য সম্পর্কে তাই আমাদের উচিত এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং তার উপর মেনে নিয়ে আখেরাত কল্যাণমুখী হওয়াl
If you want to obtain much from this paragraph then you have to apply
such strategies to your won website.
Pretty! This has been an incredibly wonderful post.
Thank you for providing this information.
great article