গত বছর প্রধান এই শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা ১৭ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা
তুলে নিয়েছেন। আমানত কমলেও ব্যাংকটি ঋণ দিয়েছে ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
আমানতের বিপরীতে বিনিয়োগ বা ঋণ দেয়ার সামঞ্জস্য না থাকায় বছর শেষে ব্যাংকটিতে নগদ
অর্থের প্রবাহ ছিল ঋণাত্মক।
গ স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করা হলেও
শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া
চিঠি দেয়ার ২০ দিনের মধ্যে ঋণাত্মক স্থিতি স্বাভাবিকে আনতে বলা হলেও বছর শেষে
ব্যাংকগুলোকে লাস্ট লেন্ডার হিসেবে টাকা ধার দিতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
ব্যাংকগুলো ভালো করলেও এক বছরের মধ্যে কী এমন সমস্যা হলো এবং কাঠামোগত সমস্যা
থাকলে এতদিন কেন ব্যাংকগুলো এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলো না, সাংবাদিকদের এমন
প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।
ইসলামি ব্যাংকগুলোর মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা ব্যাংক কর্মকর্তারা দায়ী
করছেন গত বছরের নভেম্বর মাসকে। গত বছর নভেম্বরে ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি
ইসলামি ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড থেকে নামে-বেনামে সন্দেহজনক সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়।
মুরাবাহ টিআর পদ্ধতিতে নভেম্বরে এই তিন ব্যাংক কয়েকটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিলেও
ঋণের বিপরীতে তারা কোনো নথিপত্র দেখাতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
তারল্য সংকট:
ব্যাংকগুলোর সাবেক কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সময় সংবাদকে বলেন, মূলত পরিচালনা
পর্ষদের অনিয়মের কারণেই এক সময়ের জৌলুসময় এসব শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক এখন ডুবতে
শুরু করেছে। শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ নিজেদের সুবিধার জন্য
যাচ্ছেতাইভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ তুলেছে, কর্মকর্তাদের ঋণ অনুমোদনে বাধ্য করেছে এবং
পর্ষদের কথা না শুনলে তাদের চাকরি পর্যন্ত হারাতে হয়েছে। ব্যাংকের এই অব্যবস্থাপনার
দীর্ঘমেয়াদি ফসল বর্তমানের তারল্য সংকট।
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বড় রকমের পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এর
পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে আমূল পরিবর্তন আনা হয়।
২০১৮ সালে ঋণ প্রদানে কর্মকর্তাদের ওপর চাপপ্রয়োগ এবং বিপুলসংখ্যক উচ্চপদস্থ
কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইসলামী ব্যাংকে অনিয়ম প্রবেশ করে বলে অভিযোগ তুলেছেন
সাবেক কর্মকর্তারা।
বৈদেশিক বাণিজ্য এবং রেমিট্যান্স সংগ্রহে ইসলামী ব্যাংক ছিল নেতৃস্থানীয়। মানুষের ভরসাস্থল
এই ব্যাংকটি অদূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এখন ধসে পড়ছে। ব্যাংকটির দায়িত্বে যারা আছেন
ব্যাংকের কল্যাণের স্বার্থে তাদের মধ্যে ঐক্য থাকা জরুরি, যেটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সমন্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে না পারলে শক্তিশালী এ
ব্যাংকগুলো মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সাবেক এ ব্যাংক কর্মকর্তা।
এখন অনেক দক্ষ কর্মকর্তা এবং কর্মী বাহিনী আছে। মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যাংকের পরিচালনা
পর্ষদ। পর্ষদ যদি ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে না ভাবে, তাহলে সেখানে সংকট দেখা দেবে সেটাই
স্বাভাবিক।
সংকট দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ সময় সংবাদকে বলেন, শুধু শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক না দেশের যে
কোনো ব্যাংকের তারল্য সংকটের প্রধান কারণ ‘নন-পারফরমিং ঋণ’। এখন কোন ঋণকে নন-
পারফরমিং বলা হবে সেটি সরকারি হিসাব অনুযায়ী নিরূপণ না হয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা
তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী নিরূপণ করতে হবে। ২ শতাংশ হারে টাকা দিয়ে ঋণ
নবায়ন করে সেটাকে খেলাপিমুক্ত করার মাধ্যমে পারফরমিং ঋণের তকমা দেয়া যাবে না। নন-
পারফরমিং ঋণ কমিয়ে আনলে তারল্য সংকট নিজ থেকে কমে আসবে।
মহামারিতে ‘জৌলুস হারিয়েছে:
ছয় জন কর্মী ছাঁটাই করেছেন। বাকি যারা রয়েছেন, তাদের অর্ধেক বেতন দিচ্ছেন। এ ছাড়াও
সংকটে পড়ে বন্ধুদের কাছ থেকে তিনি ৫০ হাজারেরও বেশি টাকা ঋণ করেছেন।
এখন ১৫-২০ জন আসেন। মাঝেমধ্যে সংখ্যা দশে নেমে আসে। খুব নাজুক অবস্থায় আছি।
যাদের ছাঁটাই করেছি, তোমরা আপাতত অন্য কাজ করো। কোনোরকমে বাঁচো। পরিস্থিতি ভালো
হলে আমিই তোমাদের আবার ডাকব,’ যোগ করেন সমর।
ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে লোকসান গুণতে হচ্ছে জানিয়ে সমর সাহা বলেন, দিনের পর দিন
লোকসান দিয়েও শুধু ঐতিহ্য ধরে রাখতেই প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রেখেছি। অনেকেই জানেন
আমাদের সমস্যার কথা।
উপসংহার:
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে,
জৌলুস হারিয়েছে ইসলামি ব্যাংকগুলো, দায় কার? ৩১ ডিসেম্বর শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকসহ সাত
ব্যাংককে ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত লেন্ডার অব লাস্ট রিসোর্ট
অর্থাৎ ঋণ প্রদানের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ইসলামি ব্যাংকগুলোকে এ অর্থ সহায়তা দেয়
বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইসলামি ব্যাংকগুলোর দুর্দশা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। ব্যাংক আছে যারা
সিকিউরিটিজ হিসেবে বন্ড জমা দিয়ে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিচ্ছে।
ব্যাংক আমানত ১৩ শতাংশ রাখতে হয়, সেখানে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর এসএলআর রাখার
নিয়ম সাড়ে ৫ শতাংশ। অন্য ব্যাংকগুলো যেখানে বন্ডে বিনিয়োগ করে মুনাফা বা বন্ড জমা
দিয়ে টাকা তুলতে পারে, সেখানে এসব ব্যাংকের সুকুক বন্ডের পরিমাণ মাত্র আড়াই শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়ার উপায় শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সীমিত, তাই এসব
ব্যাংক তারল্য সংকটের ফাঁদে পড়েছে বলে জানান আব্দুর রউফ।
I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article.