গত পাচ দিনে ২ টা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে এই পঁচা ডোবায়। দুইটি লাশই ছিলো মাথা থেথলানো কোন অভাগা দুই নারির। লাশের পাশেই আবার ঠিক একই ভাবে রঙিন কাগজের ওপর হার্ট এর চিহ্ন আকা। গিরিশ প্রথমে ভাবতে পারে নি এটা কোন সিরিয়াল কিলার এর ঘটনা হবে। প্রথম লাশটি নিয়ে তদন্ত করছিলো তখনি আর একটি লাশ পাওয়া গেলো। লাশটি ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠালো গিরিশ। গত মাসেই এই গ্রামে গিরিশকে শিফট করা হয়েছে। মাত্র ২ মাস হলো সে পুলিশ এর চাকরিতে ঢুকেছে। তার জিবনের প্রথম কেস বলা যায় এটি। জিবনের প্রথম কেসেই সে সিরিয়াল কিলার পেয়ে যাবে এটা সে ভাবতেই পারেনি ।
“গিরিশ তোমার থেকে আমি এটি আসা করিনি। তুমি ওইখানে কর্তব্যরত অবস্থায় দুইটা খুন কিভাবে হয়ে গেলো ?”
কমিশনার এর ফোন পেয়ে গিরিশ এর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। জিবনের প্রথম ক্যাস এর থেকে বেশি সে কি বা করবে।
“রহমত এক কাপ কড়া করে চা দিতে বলো তো আমাকে”।
গিরিশ এর কথায় কন্সটেবল রহমত চা আনার জন্য বাইরে ছুটে গেলো। চেয়ারে বসে টেবিল এর ওপর পা তুলে সব ঘটনা নিয়ে ভাবছে গিরিশ । ৫ দিনে ২ টা খুন তাও আবার দুইটাই অল্পবয়স্ক মেয়ে। ক্যারেলা শহর থেকে প্রায় ৯০ কিমিঃ দূরে অবস্থিত বিলান নামের এই গ্রামটিতে লোকজন তেমন একটা নেই বললেই চলে। দুর্ভাগ্যক্রমে গিরিশ কে এই গ্রামেই শিফট করা হয়ছে। গ্রামের একটি মাত্র থানায় পুলিশ বলতে গিরিশ, সহকারি বেলাল আর কন্সটেবল রহমত, এই তিনজন মিলেই থানা চলে। আগে তেমন দুই একটা চুরির ঘটনা ছাড়া তেমন কিছুই হতো না কিন্তু হট্যাৎ করেই পাশাপাশি দুইটা খুন হয়ে গেলো। গিরিশ কমিশনার কে ফোন দিয়ে বললও “স্যার এখানে আরও পুলিশ এর দরকার কারন এই ক্যাস টা খুবই জটিল”। কমিশনার বললও “আমি জানতাম তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না তাই আমি আগে থেকেই ওইখানে নতুন পুলিশ পাঠানোর ব্যাবস্থা করেছি, ১ সপ্তাহের মধ্য তারা চলে যাবে ওইখানে ।” কমিশনার যে গিরিশ উপর ভীষণ ভাবে ক্ষ্যাপা তা গিরিশের বুঝতে সময় লাগলো না।
রহমত চা এগিয়ে দিয়ে বললও ” স্যার মানুষ এত্ত নির্মম ক্যামনে হয়? মাইয়াগুলান কত জোয়ান ছিল আহারে দেখলেই আমার মায়া লাগে ” । গিরিশ চায়ের কাপে চুমোক দিতে দিতে বললো ” রহমত আজ কের তারিখ টা কত? “স্যার ২৫ জানুয়ারি ১৯৮০।”
“এর মধ্য কি কেউ কারো নিখোঁজ এর রিপোর্ট লেখাতে থানায় এসেছিলো?”
“স্যার আমি ত তেমন কাউরে দেখিনাই”
“রহমত তুমি এক কাজ করো সব ফাইল চেক করে দেখো কেউ না কেউ তো আসবে হয়তো’
রহমত গত একমাসের সব ফাইল ঘেটে দেখলো কিন্তু কোন নিখোঁজ এর রিপরোর্ট খুজে পেলো না। “স্যার কিছুই পাইলাম না” মাইয়া গুলা কি তাইলে অন্য জায়গা থেকে আইছে? ”
‘দুইটা জিনিস হতে পারে হয়তো মেয়ের পরিবার জানেই না তাদের মেয়ে নিখোঁজ , অথবা মেয়ের পরিবার ভাবছে মেয়ে কারো সাথে চলে গেছে এই জন্য খোঁজ নিতে চায়নি , গ্রাম অঞ্চল এর মানুষের এমন ভাবাটা অস্বাভাবিক কিছুই না ”
গিরিশ ঘড়িতে দেখলো রাত ৮ টা বেজে গেছে এখন তার বাসায় যাওয়ার সময়। গিরিশ বাসায় যেতেই অরুনা তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললও “এতক্ষন এ এসেছেন আপনি”।
গিরিশ এর সারাদিন এর সব ক্লান্তি মনে হয় এক নিমিষেই চলে গেলো । অরুনা গিরিশ এর বউ , পুলিশ এর চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে ৫ বছর প্রমের পর অরুনা কে বিয়ে করে গিরিশ । বাসায় মানুষ বলতে মাত্র তিনজন গিরিশ , অরুনা আর তাদের কাজের মেয়ে হারিনি। মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই অনাথ তাই ওদের সাথেই থাকে আর অরুনা কে কাজে সাহায্য করে। অরুনা খুব ধৈর্য সম্পন্ন একটা মেয়। সারাদিন একা একা এই গ্রামের বাসায় একা থাকা সহজ কোন ব্যাপার না।
রাতে খাওয়ার টেবিল এ অরুনা জিজ্ঞেস করলো “আচ্ছা ওইদিন এর লাশ টার কি কোন খোজ পেলে”?
“না আজকে আবার একটি মেয়ের লাশ পেয়েছি ওই একই জায়গায় একই ভাবে ”
“অরুনা অবাক হয়ে বললও তাই নাকি? এটা কি তাহলে সিরিয়াল কিলার এর কাজ”?
“এখন ও কিছু বলা যায় না ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে বলতে পারবো”।
রাতে খাবার এর পর দুইজন কিছুক্ষন প্রতিদিন এর মতো টেলিভিশন দেখলো, তারপর ঘুমাতে গেলো। দুইজন এর সারাদিন এর ক্লান্তি বিছানায় যেতেই সব দূর হয়ে যায় ।
পরদিন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলো, কোন শক্ত কিছু দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে হত্যা করার পর মুখ থেতলে দেয়া হয়েছে। এবং সবচেয়ে অদ্ভুদ বিষয় মেয়েটিকে হত্যার পর তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। গিরিশ ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখে খুবই চিন্তায় পড়ে গেলো। রহমত তার টেবিল এ এক কাপ চা দিয়ে বললও
“স্যার চা খাইয়া মাথা ঠান্ডা করেন”, আইচ্ছা স্যার দুইডা মাইয়ার কি মারার পরেই শারিরিক সম্পর্ক করছিলো”? রহমত অধির আগ্রহে গিরিশ কে প্রশ্ন করলো ।
দ্বিতীয়টার ময়না তদন্ত এখনও শেষ হয়নি তবে আমার ধারনা যেহেতু প্রথম জন এর সাথে এটা করা হয়েছে দ্বিতীয় জন এর সাথে সম্ভবত এটাই করা হয়েছে কারন দুইজন এর খুনি একই। আমার ধারনা কি জানো রহমত? খুনি মানুষিকভবে অসুস্থ নাহলে এটা করবে না, আর সে যেহেতু দুইজন কে খুন করছে তাই ৩য় জন কে অবশ্যই খুন করতে নামবে , তুমি এক কাজে করো গ্রামের মেয়েদের একটু সাবধান করে দেয়ার ব্যাবস্থা করো যাতে তারা একা বের না হয়”।
স্যার আমরা তিনজন মিলে কি বা করুম ? এত্ত বড় গেরাম পাহাড়া দেয়া তো সম্ভব না
“হ্যা আমি আরও কিছু কন্সটেবল দতে বলেছি, কিছুদিন এই চলে আসবে “, মেয়েগুলার পরিচয় কি পাওয়া গেছে?
“না স্যার কেউ আসে নাই খোজ নিতে , বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে কবর দিতে হইবও চেহারা চিনার উপায় নাই “।
বিকেলে একটা মধ্যবয়স্ক ছেলে থানায় এসে গিরিশ কে বললও তার ছোট বোন ইন্দ্রানি ৭ দিন ধরে নিখোঁজ।
“৭ দিন ধরে নিখোঁজ তাহলে এতদিন পর কেন এসেছো”?
“স্যার আমার বোন একটা ছেলে কে ভালোবাসতো আমার বাবা মা তা মানতে পারে নি তাই সবার ধারনা সে তার সাথে ভেগে গেছে কিন্তু আমার কাছে মনে হয়না সে ভেগে গেছে কারন আমার বোন আমাকে সব বলতো সে যদি নিজের ইচ্ছায় চলে যেতো আমাকে অবশ্যই একতা চিঠি লিখে জানিয়ে দিতো”।
“তোমার বোনের বয়স কতো ছিল? আর যেদিন নিখোঁজ হয়েছে ওইদিন পরনে কি ছিল”?
ছেলেটির বর্ণনা অনুযায়ি গিরিশ বুঝতে পারলো প্রথম মেয়েটিই ছিলো ইন্দ্রানি , গিরিশ ছেলেটিকে মেয়েটির লাশ এর কাছে নিয়ে দেখালো , ছেলেটি সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে মাটিটে লুটিয়ে পরলো। এই দৃশ্য দেখে গিরিশ মনে মনে ভেবে নিলো যেভাবেই হোক তাকে এই খুনিকে খুজে বের করতেই হবে।
সেদিন সন্ধ্যা পার হতে না হতেই রাতে আর একজন এলো তার মেয়ে হাড়িয়ে গেছে এই অভিযোগ নিয়ে।
“কবে থেকে নিখোঁজ”?
“সার কাল রাত থেকে”।
“বয়স কত”?
“সার ২০”।
“পরনে কি ছিল”?
“লাল রঙের জামা”।
প্রথমে গিরিশ ভেবেছিলো এটি হোয়তো দ্বিতীয় লাশটি হবে কিন্তু বর্ণনা শুনে বুঝতে পারলো এটা অন্য কেউ । এই মেয়ের লাশ পাওয়ার আগে আগে এখন মেয়েটিকে উদ্ধার করতেই হবে, নিস্পাপ একটি মেয়ের জীবন গিরিশ এর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চলবে—-