নিলয় আস্তে আস্তে আমার সামনে আসতেছে , আর আমি পিছনে যাচ্ছি, আমি মনে মনে দোয়া পরতেছি, আমি তো শীউর ছিলাম সে আমাকে খুন করবে যেভাবে তার বউ কে কুটি কুটি করছে আমাকে ও করবে। আমি পেছনে যেতে যেতে দেয়াল এর বাধায় আটকে গেলাম আর নিলয় আমার অনেক কাছে চলে আসল, হালকা আলোতে ওর চেহেরা টা আমি আজ পুরোপুরি স্পষ্ট ভাবে দেখলাম , চোখ গুলো এত্ত মায়াবী আমি এক মিনিট এর জন্য সব ভুলে গেলাম ভুলে গেলাম সে একজন খুনি, হট্যাৎ খুব ইচ্ছা করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরতে । কি ভাবছি আমি এগুলো! সে আমার হাত ধরলো! আমার শরির ইতিমধ্য ঠান্ডা হয়ে যাওয়াতে তার হাতের স্পর্শ কেমন যেন উষ্ণ মনে হচ্ছিলো ।
এতক্ষন তাকিয়ে থাকার পর নিলয় এর মুখ থেকে এই প্রথম কথা বের হলো সে আমাকে বললো, “তুমি আমাকে এত্ত ভয় পাও কেন?” আমি কিছু না বলে নিচে তাকিয়ে আছি। সে আমাকে বললো “আমার দিকে তাকাও”, আমি তার দিকে তাকালাম তার চেহারাটা দেখে আসলে আমার এই প্রথম খুব নিষ্পাপ মনে হলো । নিলয় বললও “আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয়? তুমি আমার সাথে যা করতেছো এর জন্য তোমাকে কি শাস্তি দেয়া যায়”? “তোমার জন্য রাতে ঘুমাতে পারিনা”, এই কথা বলার সাথে সাথে আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে কোন রকম দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম। আমি খুব দ্রুত বাসায় চলে এলাম।
আমার মাথায় এখন নতুন চিন্তা ডুকে গেলো, ছেলেটার চেহারা বার বার মনে পরতেছে, আমি অনেকটা তার চোখের মায়ায় পরে গেলাম। কিছুই ভালো লাগতেছে না অনেক অস্থিরতা অনুভব করতেছি।
পরদিন কলেজ এ গেলাম , সব ভুলে যাওয়ার চেস্টা করতেছি, এই প্রথমবার মনে হয় নিলয় কে দেখে আমার মধ্য ঘৃণার অনুভূতির চেয়ে বেশি অন্যরকম কিছু অনুভূতি হলো। নিজের গালে থাপ্পর মারতে ইচ্ছে হচ্ছে । ক্লাস এ আমি কয়েকবার নিলয় এর দিকে তাকালাম আর যতবার তাকাই দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার আমার দিকে তাকানো দেখেই ক্রমশ আমার হার্টবিট বেরে যাচ্ছে, এটা স্বাভাবিক নিলয় কে দেখলেই আমার হার্ট বিট বেরে যায় কিন্তু আজকেরটা অন্য দিনের থেকে আলাদা । ক্যান্টিনে বসে আছি ছুটির পর, তখন মারিয়া আমার সামনে এসে বললো। মেয়েটা আমার সামনে আসলেই তার সৌন্দর্য দেখে আমার চোখ আটকে যায় আর ইচ্ছা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে , মারিয়া ক্লাস এর সবচেয়ে সুন্দরি মেয়েদের মধ্যে একজন। সে আমাকে বললো, “নিলয় কি তোমার খুব কাছের কেউ?” আমি অবাক হয়ে বললাম “না তো কেন”? মারিয়া বললো” না ওকে প্রায় দেখি তোমার সাথে অন্য কারো সাথে এখনো দেখিনাই।” আমি বললাম “না আসলে”– আমার কথা শেষ না হতেই মারিয়া বললো “আমি নিলয় কে খুব পছন্দ করি আর তাকে বয়ফ্রেন্ড বানাতে চাই তুমি আমাকে সাহায্য করবা প্লিজ প্লিজ”! আমি মনে মনে ভাবতেছি “আচ্ছা এটারই কমতি ছিলো” । আমি হ্যাঁ না কিছুই বললাম না কিন্তু মারিয়া আমাকে বললো “আমি জানি তুমি আমাকে হেল্প করবা” এটা বলে সে আমাকে এমন ভাবে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো যেন আমি তার হেল্প করতে রাজি হয়ে গেছি!
পরদিন মারিয়া আমার সাথে বসলো আর আমাকে বার বার মনে করিয়ে দিলো তাকে সাহায্য করার কথা। আমি আর কি করবো বাধ্য হয়ে তার কথায় রাজি হলাম , আমি আবার মানুষ কে তেমন না করতে পারিনা। মারিয়া আমাকে একটা চিঠি দিলো নিলয় কে দেয়ার জন্য, আমি ছুটির পর নিলয় কে চিঠি দিয়ে বাসায় চলে গেলাম কিছু বললাম না। রাতে একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো আমি রিসিভ করার পর আমাকে বললও, “তুমি আমাকে ভালোবাসো না ঠিক আছে কিন্তু এর পর থেকে এসব কাজ আর করবানা”, “আমি তোমাকে ভালবাসি, তুমি না বাসলেও আমার কিছু যায় আসে না”। এতা বলার পর কল কেটে গেলো ।
পরদিন কলেজ এ যাওয়ার পর মারিয়া সাথে কিছু মেয়ে আমাকে ঘিরে ধরলো। এর মধ্য মারিয়া আমাকে বললও” তুমি এত্ত চালু জিনিস আগে তো জানতাম না আমার প্রেম করাতে গিয়ে নিজেই নিলয় এর সাথে প্রেম করা শুরু করছো”! আমার রাগ উঠে গেলো তার কথা শুনে উপকার করতে গিয়েও আমি বিপদে পরে গেলাম। আমি বললাম “বাজে কথা বলাবা না আমার তার উপর কোন ইন্টারেস্ট নাই”। ও বললও “ইন্টারেস্ট আছে না নাই তা তো জানি আমি , নিলয় আমাকে কল দিয়ে বলছে সে নাকি তোমাকে ভালবাসে”, এটা বলে মারিয়া আমার সামনে এসে এক গ্লাস কোক আমার জামার উপর ফেলে দিইয়ে বললও “ওহ সরি”! এমন সময় হঠাৎ নিলয় পেছন থেকে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো আর মারিয়াকে বললও “আমি যতটা ভাবসিলাম তুমি তার থেকেও জঘন্য “! মারিয়া আর তার গ্রুপ নিলয় কে দেখে চলে গেলো । নিলয় আমাকে একটা টিস্যু দিলো। আমি কিছু না বলে চলে গেলাম ক্লাসে। আজ আমার কাছে কেন যেন মনে হচ্ছে এই ছেলেটা একটা খুনি হতে পারে না! নাকি সে আমার সামনে ভালো সাজার চেষ্টা করছে!
নিলয় প্রায়ই আমার আশে পাশে ঘুর ঘুর করাতে ক্লাসের অনেক মেয়েদের জেলাসির কারন হয়ে দাড়িয়েছি আমি । আচ্ছা ছেলেটা যদি খুনি না হতো আমি কি তাকে ভালোবাসতাম? যত যাই হোক সে একজন খুনি তাকে এড়িয়ে চলাই আমার জন্য ভালো। পরদিন স্যার আমাকে ডেকে পাঠালো অফিস রুমে। স্যার আমাকে বললো “দেখো তুমি একজন ভালো স্টুডেন্ট কিন্তু এটা লেখাপড়া করার সময় এখন তোমার প্রেম ভালোবাসার সময় না “! এটা শুনে আমার মাথা এত্ত গরম হয়ে গেলো আমি শিউর ওই নিলয় কিছু বলেছে সবার সামনে আর কথা স্যার দের পর্যন্ত গড়িয়েছে । আমি আর এসব নিতে পারবো না ছেলেটার সাথে আমার কথা বলা দরকার, ওর জন্য আমার জিবনে এত্ত সমস্যা । আমি নিলয় কে বললাম আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে আপনি একটু ছুটির পর থাকবেন। ছুটির পর দেখলাম নিলয় অপেক্ষা করছে। আমি তার সামনে গিয়ে বললাম “দেখেন আমি আপনাকে কোন ভাবেই ভালবাসি না আমার জিবনে এত্ত সমস্যা তৈরি করা বন্ধ করেন প্লিজ”! নিলয় বললো “আমি কি করলাম?” আমি রাগ করে বললাম আপনি দয়া করে আমার আশে পাশে আর থাকবেন না প্লিজ সবাই কে এটাও বলবেন না আপনি আপনি আমাকে ভালবাসেন! এসব কথা শুনে কিছু না বলেই চলে গেলো! কি অসভ্য একটা ছেলে!
পরদিন দেখলাম নিলয় আর কলেজ এ আসেনি, না আসুক আমার কি আমার ভালো হলো। সেদিন জানতে পারলাম নিলয় স্যার কে কিছু বলেনি বরং মারিয়া সবার কাছে আমার নামে বাজ কথা বলে বেরাচ্ছে! তখন নিজের উপর খুব রাগ হলো ছেলেটাকে কত কি বললাম! এখন নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে পুরো কলেজ এর সবাই আমাকে অনেকটা বাজে চোখে দেখছে আমার সাথে কথা বলছে না কিন্তু আমার দোষ টা কি ছিলো! —-