চোখ গুলো খুব চেনা লাগছে, সেই ছোট বেলায় দেখেছিলাম, বড় হওয়ার পর ওদের বাসায় গেলেও তেমন দেখিনি সারাদিন নিলয় দরজা বন্ধ করে একা থাকতো। ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন!এত মায়াবি চোখের মানুষ কিভাবে একটা মানুষ কে খুন করতে পারে আমি ভেবে পাইনা। তার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে ভয় এ হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো আমার! তারপর কিছুক্ষন পর সে চলে গেলো।
একটু পর নিরা আসলো নাস্তা নিয়ে। রুমে ডুকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছি বিএফ হইছে নাকি। আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম কারন কিছু দিন আগেই আমার ব্রেকাপ হইছে ব্রেকাপ এর কথা কাউরে বলতে ভাল্লাগেনা। পরানো শেষ এ বাইরে বের হলাম রিক্সা খুজতেছি এমন সময় হটাৎ চোখ গেলো ওপরের এক রুমের জানালায় সেখানে নিলয় দাঁড়িয়ে আমার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে ছিলো আমি ভয় পেয়ে রিক্সা ছাড়াই হেটে হেটে ওই জায়গা ত্যাগ করলাম। বাসায় আসার পর খালি একটা চিন্তা মাথায় ঘুরতেছে ছেলেটা আমার দিকে এভাবে কেন তাকিয়ে থাকে?
আমাকে কি খুন এর জন্য নেক্সট টার্গেট করবে! এসব কথা ভাবতে ভাবতে ফেসবুক ব্রাউস করতেছিলাম তখন দেখলাম নিলয় আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিসে। আমি এইবার কি করবো বুঝতে পারছিলাম না আমার পেছনে কেন লাগলো! ভাবলাম আর যাবোনা পড়াতে কিন্তু আমার যে এটা ছাড়া এখন আর গতি নাই হাতে কোন চাকড়ি ও নাই, তাই ভয়ে ভয়ে রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করলাম মনকে সান্ত্বনা দিলাম শুধু শুধু আমাকে কেন মারবে! ফেসবুক অফ করে ঘুম দিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক এ ডুকে দেখলাম ছেলেটা রাতে ম্যাসেজ দিসে “গুড নাইট”।
আমি তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দিলাম দেরি করলে যদি আমাকে কোপাতে আসে আমি কি করবো! তাই সাথে সাথে রিপ্লাই দিলাম গুড নাইট। তখন দেখলাম সে রিপ্লাই করছে এখন নাইট না মর্নিং। ভাবতেছি এত্ত বুদ্ধি মাথায় আবার অন্য মানুষ রে খুন করে কেমনে। আমি এক কথায় বাধ্য হয়ে রিপ্লাই দিলাম সরি গুড মর্নিং। তারপর সে আর ম্যাসেজ দিলোনা একপ্রকার হাফ ছেড়ে বাচলাম আমি। বিকালে গেলাম পড়াতে। বাড়িটা বেশি বড় বিধায় সবসময় খালু খালি মনে হয়। আমার স্টুডেন্ট আজ আমাকে একটা চকলেট দিলো, চকলেট পেয়ে মন টা ভালো হয়ে গেলো যদিও এই বাসায় আসলেই কেন জানি আমার ভয়ে মন খারাপ হয়ে যায়। আমি চকলেট খেতে খেতে স্টুডেন্ট কে জিজ্ঞেস করলাম কি মনে করে চকলেট দিলা?
আমার স্টুডেন্ট বললো আমি দেই নাই নিলয় ভাইয়া দিছে। কথা শুনে আমার শরির ঠান্ডা হয়ে গেলো, ভাবতেছি এটাতে কিছু মিশিয়ে দেয়নি তো আমি এখন মারা গেলে আমার আব্বু আম্মু কি করবে! এসব কথা ভাবতে ভাবতে অনুভব করলাম সুস্থই আছি। তাহলে নিলয় আমাকে চকলেট কেন দিলো! যে ছেলে একটা মানুষ কে খুন করে তার মধ্য কাউকে চকলেট দেয়া মন মানুষিকতা আসে কিভাবে! আজ কে ও ওই বাসা থেকে বের হওয়ার পর একই দৃশ্য দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কি করবো আমার ভয় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ছেলেটার মাথায় কি চলতেছে! আমি কি বড় কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছি! পরদিন সকালে কলেজ এর জন্য বের হলাম হাতে তেমন টাকা পয়সা নাই তাই ১৫ মিনিট এর রাস্তা হেটে পার করতে হবে। হাটতেছি আর ভাবতেছি আজ যাব না পড়াতে।
এমনি একটা মানুষিক রোগি প্লাস ভয়ানক খুনির নজর আমার দিকে কিভাবে নিজেকে বাচানো যায়। আরে ধুর মেরে কি আর ফেলবে নাকি এমনি সব ঠিক হয়ে যাবে দুই দিন পর। এইসব ভাবতে ভাবতে তিন রাস্তার মোড় এ আসতেই দেখি নিলয় একটি রিক্সা নিয়ে কার জন্য যেন অপেক্ষা করছে, আমি দেখে কই যাব কিছু বুঝতে না পেরে উল্টা হাটতেছি আর দেখি সে রিক্সা থেকে আমাকে ডাকতেছে এমন ভাবে ডাকতেছে যেন আমি তার অনেক আগের কোন পরিচিত মানুষ। আমি ভয়ে থেমে তাকে সালাম দিলাম। সে বললো রিক্সায় আসো আমি তোমার কলেজ এর দিকে যাচ্ছি তোমাকে নামিয়ে দেই। আমার মাথায় একসাথে অনেক গুলো প্রশ্নের উদয় হলো সে কিভাবে জানলো আমি কলেজ এ যাচ্ছি! এমন ভাবে সে অপেক্ষা করছিল যে সে জানতো আমি এদিক দিয়ে আসবো আর সে আমার জন্যই রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি কি করবো ভয় এ আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সে বললো কি হলো ওঠো! আমি আর দেরি না করে উঠে গেলাম রিক্সায়। এই মুহুর্তে আমি একজন ভয়ানক খুনির সাথে রিক্সায় বসে আছি ভয়ে আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা…..