আমি আর তোমার সাথে থাকতে পারবো না! মাহিব এর কথা শুনে চমকে উঠলো রিদা। গত বছর দুই বছর শেষ হয়ে তিন বছরে পা দিয়েছিলো তাদের সম্পর্ক। কিন্তু আজ হট্যাৎ করে এই কথা কেন বলছে মাহিব? রিদা কোন রকম নিজেকে সামলে নিয়ে বললও তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না মাহিব? মাহিব বললও একদম ই না । নিজেকে দেখো! তোমাকে কোন ভাবেই আমার সাথে মানায় না! তোমার মনে হয় না আমি তোমার থেকে ভালো কাউকে ডির্সাব করি? আমি তার কথা শুনে একদমই চমকে গেলাম। আমি কখনই ওর সাথে রিলেশন এ যেতে যাই নি বরং সে আমার পেছনে ৬ মাস ঘুড়ছে আরো কতো পাগলামি করছে।
চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করতে করতে এটতাই অসুন্দর হয়ে গেছি যে মাহিব আমাকে আর ভালইবাসে না! এসব কথা ভাবতে ভাবতে রিদার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো মাহিব কে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু মাহিব কিছুতেই বুঝতে চাইলোনা। দুই বছরে যেভাবে বলেছে রিদা ওইভাবে থেকেছে যখন ইচ্ছা যা ইচ্ছা করছে, অনেকবার শারিরিক সম্পর্কও করেছে। রিদা কখনো কিছু বারন করলে মাহিব তাকে তার ভালোবাসার দোহাই দিতো , এখন কোথায় গেলো সেই ভালোবাসা! রিদার রক্তে যেন মাহিব মিশে গেছে তাকে ছেড়ে থাকার কথা সে এক মুহূর্তের জন্য ও ভাবতে পারে না । সব কিছু ভেবে রিদা কান্না কাটি করে মাহিব এর পা ধরতে বাধ্য হলো , পার্কের কিছু মানুষ হয়তো অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখছে , কিন্তু এসব তার মনে নেই তার চোখের সামনে শুধু এখন ৩ বছর এর সব সৃতি ভাসছে , তাকে যেভাবেই হোক মাহিব কে আটকাতে হবে। কিন্তু মাহিব কোনভাবেই তার কথা শুনলো না। চলে গেলো সব শপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে।
রিদা পার্কে একা বসে কাদছে। চারদিকে অনেক মানুষ কিন্তু বুকের ভেতরে কেমন যেন খালি খালি লাগছে। রিদা বাসায় চলে গেলো বাথ্রুমের দরজা লাগিয়ে নিজের শরির কে পবিত্র করার অযথা চেস্টা করে যাচ্ছে । নিজের উপর ঘৃণা হতে লাগলো ভীষণ। একটা ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কে কুচি কুচি করে কাটতে চেয়ে ও পারলো না। এত যন্ত্রনা মনে হয় মরণেও নাই । রিদা অনেক বার মাহিব কে ফোন দিলো কিন্তু মাহিব তার নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে। রিদা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। হট্যাৎ মাহিব আর রিদারএকটা ছবি রিদার সামনে চলে আসলো, ছবি টা তাদের ১ বছর বার্ষিকী তে তোলা । ওইদিন তা ছিল রিদার জন্য খুব স্পেশাল কারন রিদা ভেবেছিলো মাহিব সব ভুলে গেছে কিন্তু তাকে সারপ্রাইজ দিয়ে তার বাসার সামনে চলে আসে । পরের ছবিটা ছিলো তাদের প্রথম একসাথে কাটানো একান্ত সময়ের দিন এর ছবি, মাহিব রিদাকে তার বাসায় নিয়ে যায় তার বাব মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে বলে, কিন্তু বাসায় কেউ ছিলও না, কিন্তু মাহিব নাকি সেটা জানতো না। প্রথমে রিদা বারং করলেও মাহিব এর জোড়াজোড়ি তে সে রাজি হয়ে যায়। রিদা তাড়াতাড়ি করে সব ছবি ডিলিট করে দিলো। সারাটা রাত রিদার এক ফোটা ঘুম আসলো না। সারাদিন মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে থাকে যদি কেউ ফোন দেয়।
মাহিব কে রিদা কিছুতেই ভুলতে পারছে না । বার বার মাহিবের সব কথা রিদার মনে পরে যাচ্ছে। আর মাত্র ৪ দিন পর রিদার জন্মদিন । এইবার এর জন্মদিন টা তাকে একি কাটাতে হবে! মাহিব তো প্রতি বছর তার সাথে থাকে। গত বছর মাহিব সারাদিন তার সাথে ছিলো তাকে একটু পর পর ভালোবাসি বলতেছিলো। আচ্ছা মানুষ এভাবে এত্ত তাড়াতাড়ি কিভাবে পালটে যায়। রিদা কোন ভাবেই মাহিব কে ভুলতে পারছে না। সারাদিনে একটা কিছু মুখে নিতে পারছে না, ঘুম ক্ষুদা সব চলে গেছে চিরতরে! মাহিব এর পাশাপাশি তারও রিদার সাথে ব্রেকাপ করে ফেলেছে ।
রিদার মা খুব বেশি চিন্তায় পরে গেছে । সারাদিন মেয়েটা ঘরে একা পরে থাকে। কারো সাথে কোন কথা বলে না। মেয়েটা তার খুব শান্ত ,রাগ তেমন নেই বললেই চলে। কে মেয়েটাকে কষ্ট দিছে কে জানে! রিদার মা দরজার কাছে গিয়ে মেয়েকে ডাকলো। খুব চিন্তা হচ্ছিলো তার। মেয়ে দরজা খুলছে না । কিছুক্ষন পর রিদা দরজা খুললো। ২ দিনে মেয়েটা কেমন রোগাটে হয়ে গেছে। রিদার মা বললও কি হয়েছে মা তোর? রিদা কোন কথা না বলে মার কোলে মাথা রেখে শান্তিতে কিছুক্ষন শুয়ে থাকলো, কখন যে ঘুমিয়ে গেলো টেরই পেলো না। ঘুমের মধ্য ও মাহিব তাকে জালাচ্ছে। ছেলেটা তাকে কোন ভাবেই বাচতে দিবে না!
আজকে সকালে রিদা একটা সিদ্ধান্ত নিলো, যে মানুষটা আমকে কষ্ট দিলো তার জন্য আমি কেন কষ্ট পাবো! যার পাপের শাস্তি তাকে পেতে হবে আমি তাকে দিবো আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার শাস্তি, কঠিন শাস্তি।
রাতে রিদার এক বন্ধু রিদাকে বললও মাহিব নাকি পরদিন বিকাল ৪ টায় পার্কে কোন এক মেয়েকে প্রপোজ করবে। রিদা খুব শান্ত ভাবে এক প্ল বানলো কিভাবে রাহিব কে কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দেয়া যায়, তাছাড়া সে যা করেছে এতে করে এটা করতেই হবে তাকে। ঠান্ডা মাথার মেয়েতা খুব ঠান্ডা মাথায় একটা প্ল্যান বানালো কাউকে কিছু জানালো না সব একাই করবে সে।
পরদিন রিদা পার্ক এ গিয়ে দেখলো মাহিব ফুল নিয়ে কোন মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। রিদা ভাবলও আরেকটা মেয়ের জীবন নস্ট আমি কিছুতেই হতে দিবো না। এটা ভাবতের রাহিব এর সামনে গিয়ে দড়ালো । মাহিব তার দিকে তাকাতে না তাকাতেই রিদার ব্যাগ থেকে একটা ছুড়ি বের করে মাহিব এর বুক একদম ছিন্নভিন্ন ফেললো । আসে পাশে সব মানুষ দেখছিলও কিন্তু কেউ ভয়ে সামনে আগাচ্ছিলও না। রিদা ক্রমশ ছুড়ি চালিয়ে যাচ্ছে মাহিব হয়তো এতক্ষন এ মরে গেছে কিন্তু তাও রিদা থামছে না। মাহিব এর নিল রঙের শার্ট টি একদম লাল হয়ে গেছে। পাশে পরে থাকে ফুলের পাশে একটি আংটির বক্স ও ছিলও। সবকিছু লাল হয়ে গেছে। হট্যাৎ রিদার চোখ গেলো ফুলের উপর পরে থাকা একটি কাগজে যেখানে লেখা ছিলও “হ্যাপি বার্থডে রিদা উইল ইউ ম্যারি মি?”।